দিনাজপুরে লিচুর ফুল থেকে মধু আহরণে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। এ বছর রেকর্ডসংখ্যক মৌচাষির আগমন ও বিপুল পরিমাণ মধু সংগ্রহের ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। মৌসুম শেষে স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা খামারিরা জানাচ্ছেন, এ বছর লিচুর ফুল থেকে আহরিত মধুর পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং মৌচাষি সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, মধু উৎপাদনের পরিসংখ্যানে কিছু পার্থক্য থাকলেও উভয়পক্ষই একমত—এবার মধু আহরণে এক বিপ্লব ঘটেছে।
সরকারি হিসাবে, ২০২৪ সালে ৩৩৫ জন খামারি প্রায় ১২ হাজার মৌবক্স বসিয়ে ৬৭ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন করেছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে এখনও সরকারি চূড়ান্ত তথ্য সংগ্রহ চলমান।
অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গ হানি কমিউনিটি ও মৌচাষিদের অভিমত আরও বিস্ময়কর। তাদের দাবি, চলতি মৌসুমে প্রায় দেড় হাজার মৌচাষি দিনাজপুরে প্রায় সোয়া লাখ মৌবক্স স্থাপন করেন। প্রত্যেকে গড়ে ৩ টন করে মধু আহরণ করেছেন। এই হিসেবে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের মৌচাষি বজলুর রশিদ বলেন, ‘‘এবার লিচুর ফুলের পরিমাণ কিছুটা কম ছিল, কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মধু আহরণ ভালো হয়েছে। অনেক মৌচাষিই ১০০টির বেশি মৌবক্স নিয়ে এসেছেন, আর প্রত্যেকে প্রায় ৩ হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করতে পেরেছেন।’’
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ৫ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান হয়েছে। গত বছর মধু সংগ্রহের জন্য ৪ হাজার ৯৫৪টি বক্স স্থাপন করা হয়েছিল।‘জেলায় প্রায় দেড় হাজার মৌচাষি মৌবক্স স্থাপন করেছেন। এবার প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ১৫০কোটি টাকা। দিনাজপুরে মধু উৎপাদন জনপ্রিয়তা লাভ করছে।’
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আনিছুজ্জামান বলেন, ‘মৌমাছি দিয়ে পরাগায়ন হলে গাছে ২০ ভাগ লিচু বেশি উৎপাদন হয়। বর্তমানে লিচুর ফুল থেকে সবচেয়ে বেশি মধু সংগ্রহ হচ্ছে। লিচুর ফুলের মধু জমাট বাঁধে না। বিসিক ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর অনেক যুবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। স্থানীয়দের আরো প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাতে পারলে উৎপাদন বাড়বে। বিপুল আয় হবে।’